চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন কলোনীতে শ্রেণীশিক্ষা কার্যক্রম,২০১৮-১৯





২০১৭ এর আগস্ট মাসের শুরুর দিকে ষোলশহর বস্তিতে পড়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানুষের মত মানুষ করার। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে সম্পর্ক ভালো হলেও সম্পর্কটা ভালো বনেনি ক্লাসরুমের মালিকের সাথে।যার ফলে সেখানে আর খুব বেশিদিন পড়ানো সম্ভব হয়নি আমাদের।
তাতে কি?
দমে যাইনি আমরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের পাশে একটি রুম ভাড়া করে পড়ানোর কাজ পুনরায় শুরু করি ষ্টেশন কলোনীর বাচ্চাদের এবং সেইসাথে যোগ দেয় শহর থেকে শাটলে করে আসা সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।

কাজ কিভাবে করলে ভালো হয়, কি করা অনুচিত, সব ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের পরামর্শ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক ড.হানিফ সিদ্দিকী স্যার। ২০১৮ সালের মার্চের ১৮ তারিখ তিনি এসে ক্লাসরুম উদ্বোধন করেন এবং আমাদের এই ধরনের ভালো কাজে লেগে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

দিনে দুই শিফট করে শিশু থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। বাচ্চাদের পড়াশোনার আগ্রহও ছিল অপরিসীম। "ভাইয়া,এটা একটু বুঝিয়ে দেন।ঔটা আরেকবার বলেন?”-ইত্যাদি নানামুখী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একবুক ভালোবাসা নিয়ে পড়ানোর কার্যক্রম চালিয়ে যায় আমাদের মেধাবী স্বেচ্ছাসেবীগণ। শুধু তাই নয়,তাদের লাইফ মেন্টর হিসেবে কাজ করেছে আমরা। তারা ভালো নাম্বার পেলে তাদের সকল আবদার আমরা পূর্ণ করার চেষ্টা করি।

২০১৮ সালের পিএসসি পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল চারজন। এর মধ্যে একজন ৪.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।এই অকল্পনীয় সাফল্যের পেছনে কাজ করে গেছে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষকগন। ঠেলাগাড়ি চালকের মেয়ে সাহিদার দ্বিতীয় শ্রেণির সব বিষয়ে ৯৯-১০০ পাওয়া নাম্বার প্রমান করে আমাদের শিক্ষকদের সাফল্যকথা। যেন স্ফুলিংগ থেকে অগ্নিশিখা।

নানা বাধা বিপত্তির মধ্যে শিক্ষকগন তাদের শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়েছেন। ব্যস্ততাময় জীবন থেকে এক টুকরো সময় তাদের জন্য অবধারিত থাকতো। কষ্ট লাগে যখন জান্নাতদের মত মেয়েরা পরিবারের হাল ধরার জন্য আর পড়বার সুযোগ বা সময়টুকু থাকে না।সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার থাকেনা। কারণ আমরাই তাদের শিখিয়েছি- সবার আগে পরিবার অর্থাৎ মা-বাবা। এই গল্পগুলোই বলে দাঁতে দাঁত চেপে কিভাবে আমরা যুদ্ধ চালিয়েছি।

দিনমজুরের ছেলে আমজাদ কিংবা রাজমিস্ত্রীর ছেলে হৃদয় রা যখন স্কুলের প্রথম বেঞ্চে বসে ক্লাস করে তখন আমাদের অন্তরে এক শীতল বাতাস বয় যেন আমরা স্বপ্নের কারিগর।
"বেঁচে থাকুক তারা,
বেঁচে থাকুক তাদের স্বপ্নগুলো"